লীগ্যাল সাপোর্ট সার্ভিস এর পক্ষ হতে নিম্নোক্ত ক্রয়-বিক্রয় বিষয়ে আইনী সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে।

আবাসন প্রতিষ্ঠান বা প্রপার্টি কোম্পানিগুলোকে জমি দেওয়া বা প্লট-ফ্ল্যাট কেনার আগে বেশ কিছু দেখে ও যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। বাড়ি, প্লট বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কারও দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে তাড়াহুড়ো করে কেনার চুক্তি করতে না যাওয়াটাই বুদ্ধিমত্তার কাজ। যেহেতু আপনি আপনার সঞ্চিত অর্থ দিয়ে একটি স্থায়ী ঠিকানা গড়তে চাচ্ছেন, তাই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি জমির দলিলপত্র, চুক্তিপত্রগুলো একজন আইনজীবীকে দেখিয়ে নেওয়া ভালো। এরপর ফ্ল্যাট বুকিং দিন।

লীগ্যাল সাপোর্ট কিভাবে সাহায্য করবেঃ-  
(১) জমির দলিল সঠিক কি না, তা ভালো করে যাচাই করে দেওয়া।
(২) যে কোম্পানির কাছ থেকে ফ্ল্যাট কিনছেন সেই প্রতিষ্ঠানের সরকারি অনুমোদন আছে কি না।
(৩) রাজউক কর্তৃক অনুমোদিত প্ল্যান আছে কি না।
(৪) কোম্পানিটি রিহ্যাবের সদস্য কি না—তা যাচাই করে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করা।
(৫) ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়সংক্রান্ত সকল আইনী শর্ত ভালো করে অনুস্বরণ করে চুক্তি-পত্র দলিল প্রস্তুত করা
সুতরাং ফ্লাট কেনার আগে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। 
একজন ক্রেতা হিসেবে আইনি সহায়তায় চুক্তি করুন। তাতে কীভাবে ফ্ল্যাট কিনছেন, শর্তগুলো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। ভবন নির্মাণে যেসব উপকরণ ব্যবহার করা হবে তা চুক্তিতে উল্লেখ থাকতে হবে। ফ্ল্যাটের অনুমোদিত নকশাও আবাসন নির্মাতা ক্রেতাকে দেখাতে এবং তা দিতে বাধ্য থাকবেন। আপনি কোন ফ্ল্যাটটি কিনছেন তা চুক্তিতে স্পষ্ট করে উল্লেখ করুন। আবার আপনার বিনা অনুমতিতে ফ্ল্যাট পরিবর্তন করতে পারবে না, তা চুক্তিতে বলে রাখুন। শর্তের বাইরে অতিরিক্ত কোনো অর্থ দিতে ক্রেতা বাধ্য নন, তা–ও চুক্তিতে উল্লেখ করুন। যদি কোনো উন্নত মানের সরঞ্জাম সংযোজনের প্রয়োজন হয়, তবে দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মতিক্রমে তা করতে হবে, তা চুক্তির শর্তে উল্লেখ থাকতে হবে। রিয়েল এস্টেট আইন অনুযায়ী একজন ক্রেতা তাঁর সমুদয় মূল্য পরিশোধের ৩ মাসের মধ্যে আবাসন নির্মাতা দখল হস্তান্তর, দলিল সম্পাদন এবং নিবন্ধনের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করে দেবেন। হস্তান্তরকালে আয়তন কমবেশি হলে তার দাম ক্রয়মূল্য অনুযায়ী ৩ মাসের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। আর যদি আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হয় চুক্তিতে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণসহ সব অর্থ ক্রেতাকে ৬ মাসের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। চুক্তিতে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ না থাকলে তা পরিশোধিত অর্থের ওপর ১৫ শতাংশ হারে নির্ধারিত হবে। আবার কোনো কারণে চুক্তি বাতিল করতে চাইলে আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে আপনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিশোধিত অর্থের ১০ শতাংশ বাদ দিয়ে বাকি অর্থ ৩ মাসের মধ্যে এককালীন চেক অথবা পে-অর্ডারের মাধ্যমে ফেরত দিতে হবে। কখন আইনের সাহায্য নেবেন চুক্তি অনুযায়ী আপনার বুকিং দেওয়া ফ্ল্যাটটি সময়মতো না হলে অথবা চুক্তিতে যে নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার না করলে নকশা পরিবর্তনসহ কোনো বিষয়ে জটিলতা তৈরি হয়, তাহলে নিজেদের মধ্যে সমাধান না হলে বিষয়টি সালিস আইন ২০০১ মোতাবেক সালিশি ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে। তখন সালিশি ট্রাইব্যুনাল বিষয়টি নিষ্পত্তি করবে। ৩০ দিনের মধ্যে উভয় পক্ষ যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনে ব্যর্থ হয় তাহলে যেকোনো পক্ষ বিবদমান বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য উপযুক্ত আদালতে মামলাও করতে পারবে। এই আইনের অধীনে অপরাধগুলো প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিচার করেন। বিচারের সময় ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার করবেন আদালত। এই আইনের বিধিবিধান লঙ্ঘন করলে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা উভয় কারাদণ্ড হতে পারে। তাই ফ্ল্যাট কেনার সময় উপরিউক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করে চুক্তিতে সই করতে হবে। একবার চুক্তি হয়ে গেলে তা থেকে বের হওয়া অনেক ঝক্কিঝামেলা। তাই ভালোভাবে জেনে–বুঝে তবেই ফ্ল্যাটের বুকিং দিন। কাজ করার আগে বারবার বুঝেশুনে তবেই সিদ্ধান্ত নিন। যে প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তির ফ্ল্যাটটি কিনতে যাচ্ছেন তার মালিকানা আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে। এ জন্য প্রস্তাবিত ফ্ল্যাটটি যে জমিতে অবস্থিত, তার সর্বশেষ রেকর্ডে বিক্রয়কারীর নাম উল্লেখ আছে কি না এবং সিএস, এসএ ও আরএসসহ অন্যান্য খতিয়ানের ক্রম মিলিয়ে দেখতে হবে। জমিটি যদি ডেভেলপার কোম্পানি কোনো মালিকের কাছ থেকে নিয়ে থাকে, তাহলে এ সম্পর্কে চুক্তিপত্র আছে কি না, তা–ও যাচাই করা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানটি নতুন না পুরোনো, তাদের আগের কোনো অভিজ্ঞতা আছে কি না, অতীতে ওই প্রতিষ্ঠানের দ্বারা কেউ প্রতারিত হয়েছেন কি না, তা রিহ্যাব থেকে জেনে নিতে হবে। জমির মালিকানা এবং জমির দখলদার সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। ভূমি অফিসে গিয়ে জমির তল্লাশি দিয়ে জমির মালিকানা ও দখলদার সম্পর্কে পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। অর্থাৎ যে জমির ওপর আপনার ফ্ল্যাটটি থাকবে ওই স্থানের জমির দলিলপত্রগুলো যাচাই করে নেওয়া ভালো। কেননা অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দখল কিংবা জমি নিয়ে ঝামেলাযুক্ত জমির মালিকেরা অনেক সময় জমি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানে দিয়ে থাকেন। সুতরাং আপনি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ফ্ল্যাট বুঝে পেলেও ভবিষ্যতে আইনি ঝামেলার সম্মুখীন হতে পারেন। জমির মালিকের সঙ্গে ডেভেলপারের আমমোক্তারনামা ও যে যে চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয়েছে, তা ভালোভাবে যাচাই করে নিন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, জমির মালিক ও ডেভেলপারের মধ্যে চুক্তিগুলো রেজিস্ট্রি করা হয় না। যে কারণে জমির মালিক ও ডেভেলপারের মধ্যে চুক্তি নিয়ে কোনো ঝামেলা হলে আপনাকেই দুর্ভোগ পোহাতে হবে। ইদানীং অনেক প্রতিষ্ঠান মাঝপথে কাজ অসম্পূর্ণ রেখে যায় কিংবা নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করার অজুহাতে জমির মালিক কাজ বন্ধ করে দেন। আবার চুক্তিপত্রে উল্লিখিত ক্ষমতার বাইরে ডেভেলপার কিছুই করতে পারবে না । ওপরের সবকিছু ঠিক থাকলে আপনি ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আরেকটি বিষয় নজর দেওয়া দরকার, সেটি হলো অনেক সময় আমরা দেখতে পাই রাজউক অনুমোদন দিয়েছে ৪–৫ তলার, কিন্তু ভবন হয়েছে ৮ তলার। এ ধরনের সমস্যা থাকলে ফ্ল্যাট বুকিং না দেওয়া শ্রেয়। মনে রাখতে হবে সস্তার তিন অবস্থা। বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাবিত ফ্ল্যাটটি সরেজমিনে নকশার সঙ্গে বাস্তব অবস্থা মিলিয়ে দেখতে হবে। প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী ভূমিমালিকদের কাছ থেকে দাগ-খতিয়ান জেনে মেলাতে হবে, হাল খাজনা সঠিক আছে কি না, তা মিলিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। চুক্তির একটি মূল কপি অবশ্যই নিজের কাছে রাখবেন। ফ্ল্যাটটির ভবন নির্মাণের জন্য রাজউকের অনুমোদন আছে কি না এবং এ-সংক্রান্ত সনদ দেখে নিতে হবে। বিদ্যুৎ-সংযোগ আছে কি না এবং তা থাকলে এ বিদ্যুৎ বিল কি বাণিজ্যিক না আবাসিক, তা যাচাই করে নিতে হবে। গ্যাস-সংযোগ নেওয়ার কথা থাকলে তা আইনগতভাবে নেওয়া হয়েছে কি না দেখতে হবে। যদিও বর্তমানে নতুন ফ্ল্যাটে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। প্রস্তাবিত ফ্ল্যাটটি সরকারের খাসজমিতে পড়েছে কি না কিংবা সরকারের কোনো স্বার্থ থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। জমিটি অর্পিত সম্পত্তি কিংবা পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকায় আছে কি না, সেটাও দেখতে হবে। জমিটি আগে কোনো সময়ে অধিগ্রহণ হয়েছে কি না বা প্রক্রিয়াধীন কি না, ওয়াক্ফ, দেবোত্তর অথবা কোর্ট অব ওয়ার্ডসের জমি কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে। জমিটি কখনো খাজনা অনাদায়ের কারণে নিলাম হয়েছে কি না, খোঁজ নিতে হবে। ঋণের জন্য ফ্ল্যাটটি কোনো ব্যাংকের কাছে বন্ধক আছে কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে। জমিটির মালিক কোনো আমমোক্তার বা অ্যাটর্নি নিয়োগ করেছেন কি না, জেনে নিন। আমমোক্তার সঠিক কি না, যাচাই করে দেখতে হবে। বিক্রেতা যদি আমমোক্তারনামার মাধ্যমে ক্ষমতা পেয়ে থাকেন, এর বৈধতা যাচাই করতে হবে। প্রকৃত মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে হবে প্রকৃত মালিক যথাযথ কি না এবং আমমোক্তারটি যথাযথ হয়েছে কি না। কোনো প্রকার মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ফ্ল্যাটটি না কিনে সরাসরি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কেনা ভালো। যদি কিস্তির মাধ্যমে কেনার কথা থাকে, তাহলে কয় কিস্তি এবং হস্তান্তর কবে হবে, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট করে চুক্তিনামায় লেখা থাকতে হবে। যদি কোনো কারণে না কেনা যায়, তাহলে এটি কীভাবে নিষ্পত্তি হবে, তা-ও স্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে। ফ্ল্যাটটি এর আগে অন্য কারও কাছে বিক্রি হয়েছে কি না, খোঁজ নিতে হবে। সব ধরনের চার্জ, রেজিস্ট্রেশন ফি এবং দায়দায়িত্ব স্পষ্ট করে জেনে নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো জটিলতা না হয়। প্রশান্ত কর্মকার: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। বিজ্ঞাপন

বর্তমান সময়ে ফ্লাট ক্রয়-বিক্রয়ে ক্রেতা অনেক ধরণের গোপনীয় প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন যা তিনি কোনোভাবেই বুঝতে পারেন না, কিন্তু লেনদেন সম্পন্ন হবার পর তখন আর কোন কিছু করার থাকে।

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.